ঘৃতকুমারির বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে আজ। আনন্দে তাহার মন আকাশে বাতাশে নাচিয়া বেড়াইতেছে। মস্ত বর ঝুটিয়াছে বটে। স্বামী নন্দলাল বৈদেশিক ডিগ্রি প্রাপ্ত, কৈল্যান্ডি হইতে পাশ করিয়া সেখানেই খুঁটি গাঁড়িয়াছে। নিকট ভবিশ্যতে ঘৃতকুমারিও কৈল্যান্ডি অধ্যসিত হইবে। কি নাই তাহার শ্বশুর পক্ষের! গঞ্জে আলিশান বাড়ি, ঝাঁচকচকে ঘোড়ার গাড়ি, বাড়িতে ঝি চাকর। বাকি জীবন তাহার রাজকুমারির ন্যায় কাটিবে ভাবিয়াই তাহার মন ভরিয়া উঠিতেছে।
প্রেমিক রায়চরনকে বিবাহ করিলে এর কিছুই ঝুটিত না। রায়চরনের দুই পয়সার ফুল কি বিলেতি রেস্তোঁরার ফালান্নের ন্যায় এতো মধুর, নাকি তাহার পদ্যে ভরে পেট? রায়চরন বলিয়া আসিতেছে প্রকৌশল বিদ্যা অর্জন করিয়া কলের লাঙ্গল বানাইবে, চাষাভূষাদের দূঃখ দূর করিবে। তাহতে ঘৃতকুমারির সূখটা কোথায়? তাহাকে ওমন ভালবাসিলে কি রায়চরন তাহার সূখের কথা ভাবিত না?
তাহার উপর রায়চরনের পিতা একজন হত দরিদ্র স্কুল মাস্টার। সেখানে কি এমন বনেদি শ্বশুরালয় ঘটিত? নাকি বিবাহ উপলক্ষ্যে মিলিন এমন গলার হার, সোনার বালা, পায়ের নূপুর? তাই আবেগের বসবর্তী হইয়া এতোদিন রায়চরনকে ব্যাতীত অন্য কাহাকেও বিবাহ করিবে না বলিয়া অনেক পাত্র ফিরাইয়া দিলেও নন্দলালকে সে ফিরাইয়া দিতে পারিল না।
লোকে বলে সিংহলে নন্দলালের পিতার আমদানি-রপ্তানি ব্যাবসা কতক অবৈধ পথে চলে। তা চলুক। ব্যাবসা করিতে গেলে, টাকা পয়সা অর্জন করিতে গেলে, এমন ছোটখাট বিষয় থাকিবেই। লোকে হিংসে করে বলিয়াই এমন বলে।
[পটভূমিঃ আমরা শুধু ঘৃতকুমারিদের দোষ খুঁজিতেই অভ্যস্ত। কিন্তু যে ভোগবাদি সমাজ তাদের অন্যপায় করে তার খবর নিতে যাই না।]
চলবে...