অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশে ঋতুচক্র ঠিক বিপরীত। এখানে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের দাবদাহ আর বাংলাদেশে শীত। গ্রীষ্ম মানে এখানে ঘুরাঘুরির আর অলস সময় কাটাবার দিন। এই সময়ে প্রায় সবাই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনে। কেউ যাচ্ছে প্যারিসে, কেউ যাচ্ছে বালিতে। কেউ যাচ্ছে পর্বতে, কেউ যাচ্ছে সমুদ্রে। কেউ যাচ্ছে ক্যাম্পিংয়ে, কেউ যাচ্ছে রিসর্টে।
আমরা যারা পড়াশুনা করবো বলে কিছু দিনের জন্য এখানে এসেছি, তাদের এতো ছুটাছুটি করার সুযোগ নেই। তাই বলে কেউ থেমে নেই। প্রতিটি সপ্তাহীক ছুটির দিনে ঘুরে বেড়াই অস্ট্রেলিয়ার ছবির মত সুন্দর বিভিন্ন পর্বত, সমুদ্র আর অরন্যে। সপ্তাহ ব্যাপি ক্যাম্পিং করতে না পারলেও সপ্তাহের এক-দুই দিন ঠিকই ক্যাম্পিং করে আসি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও এই সময় সবার মনই আচ্ছন্ন করে থাকে নিজ দেশ, দেশের মানুষ আর ফেলে আসা সৃতি।
বৈচিত্রময় ষড় ঋতুর প্রতিটিই বাঙালীর মনে দোল দিয়ে যায়। প্রত্যেক ঋতু নিজ নিজ রূপ আর বাহার নিয়ে হাজির হয় বাংলার প্রকৃতিতে, সজিয়ে তোলে একে নিজ নিজ রঙে।
বাংলার গ্রামে প্রত্যেকটা ঋতু জীবনের একেকটা গল্প। পল্লী বর্ষা, গ্রীষ্মের দাব দাহ, জীর্ণ শীত, শরতের আকাশ, বসন্তের নব জাগরণ, হেমন্তের পিঠে খাওয়ার ধুম এসব নিয়ে এখানের জীবন আর জীবনের গল্পগুলো। প্রতিটি ঋতু এখানে জীবনকে ভীষন ভাবে প্রভাবিত করে। বসন্তের নবজন্ম দেখে পুলকিত হয় মন, যখন গাছে গাছে জেগে ওঠে কিশলয় এবং ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। গ্রীষ্মের স্নিগ্ধ বিকেল যেন স্বর্গীয় সুখ। শীতে শিশির-ভেজা সবুজ ঘাসে পা মাড়িয়ে সকাল শুরু হয় প্রতিটি কিশোর কিশোরির। জীবন এবং প্রকৃতি এখানে অবিচ্ছেদ্দ অংশ। এমন দেশ ছেড়ে পৃথিবীর আর কোথাও বাঙালী মন স্থীর হতে চায় না।
অস্ট্রেলিয়া এসে সব সময় মনে হয় যেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, দেশে যাওয়ার ট্রেনটা আসেবে আর অমনিই উঠে পড়ব তাতে।